ইসরায়েল কোনো আরব দেশকে ভয় না পেলেও ”আল্লার দল” হিজবুল্লাহ্ কে ভয় পায়

আজকে আমরা আলোচনা করব হিজবুল্লাহ সামরিক শক্তি নিয়ে। তাদের পরিচালিত কিছু দুর্ধর্ষ অপারেশন সম্পর্কেও আপনাদের অবগত করব।  আজ মূলত একটি লেবানন ভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এর কথা । হামাস যে ভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ছে ঠিক একইভাবে লাবনন ভিত্তিক হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ছে।

ইসরায়েল কোনো আরব দেশকে ভয় না পেলেও ”আল্লার দল” হিজবুল্লাহ্ কে ভয় পায়

তবে ক্ষমতা এবং আকার অনুযায়ী হামাস থেকে হিজবুল্লাহ বহুগুণে  বড় আছে । তারা হামাসের চেয়ে অনেক বড় এবং শক্তিশালী। লেবানন ছাড়াও আরো কিছু দেশে তারা তাদের নিজেদের শাখা পরিচালনা করে আসছে । এই সংগঠনের উৎপত্তি হাজার ১৯৭৫ সালে হাজার১৯৮২  সালে প্রথমবারের মতো লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ করতে দেখা যায়।

ইসরায়েল কোনো আরব দেশকে ভয় না পেলেও ”আল্লার দল” হিজবুল্লাহ্ কে ভয় পায় (1)

তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে  ১৯৬২ সালে ।বর্তমানে হিজবুল্লাহ সামরিক দেড় বিলিয়ন ডলার । হিজবুল্লাহ ভিত্তিক শিয়া মুসলিম জাতীয়তাবাদের হলেও বিপুল পরিমাণ সুন্নি মুসলিম ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত আছে।  অনেক সুন্নি মুসলমান সেখানে বিভিন্ন পদে আছেন ।

বিপুল পরিমাণ সুন্নি মুসলিম ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত আছে

তাদের সাথে থেকেই যুদ্ধ করছেন । তারা প্রত্যেকেই নিজেদের কে সহযোদ্ধা’ এবং এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ অনুসারী মনে করে।  নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো বিভেদ নেই । শত্রুর বিপক্ষে মুসলিম হিসাবে পরস্পর পরস্পরকে মনে করেন।

অন্যান্য সেবা সংগঠন গুলোর তুলনায় হিজবুল্লার কার্যক্রম অনেক বেশি প্রশংসনীয়। তারা পৃথিবীর উন্নত সেবা দিতে পারে। আসবা সংগঠনগুলোর বিভিন্ন অনুরোধ এখানে হুমকি-ধমকি দিয়েই শেষ শেখার হিজবুল্লাহ ইসরাইল এর ক্ষতি করার প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে ।

তাদের মোট সামরিক বাজেটের৬০% অর্থ ইরান প্রধান করে । বাকি ৪০% তারা নিজেরাই যোগাড় করে দেয়। এছাড়াও সিরিয়া এবং কাতারের কাছ থেকেই তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সামরিক সহায়তা পেয়ে থাকে। কয়েক বছর আগেই হামাস এবং হিজবুল্লাহকে অর্থায়ন করে কাতার। এই কারনে কাতার অবরোধে দেওয়া হয়েছিল ।

হিজবুল্লা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গেরিলা সংগঠন । সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও বলা হয় । তাদের অনেক পরিমাণ সেনা এবং যে সব অস্ত্রশস্ত্র আছে বিশ্বের অনেক দেশের সেনাবাহিনীর কাছে সেটা নেয়।  তাদের রয়েছে নিজস্ব আর্টিলারি ইউনিটে ট্যাংক মিসাইল অন্ড ফাইটিং ভেহিকেল নিজস্ব রাইডার এবং এয়ার সার্ভিলেন্স মুলার ইয়ার রিং।

যে সব অস্ত্রশস্ত্র তাদের কাছে আছে বিশ্বের অনেক দেশের সেনাবাহিনীর কাছে সেটা নেয়

এর আওতায় রয়েছে বিমানবিধ্বংসী anti-aircraft গান শরিফ মিসাইল সিস্টেম এবং বিভিন্ন ধরনের সার্ভিলেন্স। কারণ তাদের কাছে রয়েছে নানান রকম এনটিসিবি। যায় এমনকি তাদের নিজস্ব নৌ-কমান্ডো আছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে হিজবুল্লার নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে।

সর্বজনস্বীকৃত পৃথিবীর অন্যতম দুটি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইজরায়েলের মোসাদ এবং আমেরিকার সিআইএ-এর গোয়েন্দা সংস্থার মূল প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করে নিজ বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করাই হিজবুল্লাহ গোয়েন্দা সংস্থার মূল কাজ।

এদের ঘনিষ্ঠতম বিদ্রোহীরা এবং ফিলিস্তিনের হামাসের সঙ্গে এদের সু সম্পর্ক বিদ্যমান। হামাসের মতোই হিজবুল্লাহর প্রধান শত্রু ইসরাইলের রয়েছে । নিজস্ব প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অস্ত্র শস্ত্র ডিজাইন এবং অন্যান্য হাইটেক মিলিতারি ইকুইপমেন্ট এর পরিচালনায় শেখার জন্য হিজবুল্লাহ রয়েছে নিজস্ব মিলিতারি স্কুল।

হিজবুল্লাহ রয়েছে নিজস্ব মিলিতারি স্কুল

এছাড়াও ইরানের আইআরজিসি চার্চ কর্তৃক হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা উন্নততর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে । এর থেকে সহজেই বোঝা যায় হিজবুল্লাহ  কতটা প্রফেশনাল এবং প্রশিক্ষিত পূর্ণাঙ্গ একটি সামরিক বাহিনীর মতো করেই এইগুলা পরিচালিত হয়। তাদের রয়েছে নিজস্ব ইউনিফর্ম।

বেতন-ভাতার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মৎস্য একটি সুশৃঙ্খল চেইন অফ কমান্ড এর মাধ্যমে উচ্চ পদস্থ অফিসার এবং সৈনিকদের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিচালিত। বর্তমান হিট গুলোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ।

যদি আপনি শুধুমাত্র একটি সামরিক সংগঠন হিসেবে ভেবে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনি ভুল করবেন। শক্তিশালী রাজনৈতিক দলকে যখন শুধুমাত্র রাজনীতির মাধ্যমে ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা যাচ্ছিল না, তখন আফগান তালেবানের মতো হিজবুল্লাহ রাজনীতির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে ।

নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে বলতে গেলে, বলতে হয় বর্তমানে লেবাননে তাদের১২৮ জন সাংসদ এবং ১২ জন মন্ত্রী রয়েছে সদরদপ্তর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থিত । যেকোনো যুদ্ধ করতে সক্ষম এরকম ২৫০০০ সক্রিয় সৈনিক রয়েছে হিজবুল্লাহ। এছাড়াও রয়েছে আর ৫০ হাজারেরও বেশি।

লেবাননে তাদের১২৮ জন সাংসদ এবং ১২ জন মন্ত্রী রয়েছে

বর্তমানে তাদের ট্যাংক বহরে ২০০অধিক ট্যাংক রয়েছে। রয়েছে। ৪হাজারের অধিক ট্যাংকবিধ্বংসী । মিশরের প্রধান শক্তির জায়গা হল রকেট তাদের রয়েছে। অত্যাধুনিক সব নিজের প্রকৃত মাল্টিপল লঞ্চিং রকেট সিস্টেম বা এমএলআরএস ও আর্টিলারি বিধ্বংসী রকেট বিভিন্ন মডেলের কয়েক হাজার তারা মজুদ করে রেখেছে।

যে কোন মুহূর্তে যুদ্ধে ব্যবহার এর মাঝে এমন কিছু রয়েছে যা কিনা৬০০কেজি ওয়ারহেড নিয়ে দুইশত পঞ্চাশ কিলোমিটার এর বেশি।  হামলা চালাতে সক্ষম। ২০০৬সালে হিজবুল্লাহ ইসরাইল রাজধানীতেও নিজের হামলা চালিয়েছে ।

তাদের রয়েছে asha200 232 এবং ২৪ এর মত anti-aircraft গান এমনকি self-propelled anti-aircraft গান রয়েছে ।  এছাড়াও তাদের বহরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিলেন্স ড্রন ড্রন আছে । এগুলো ছিল মূলত হিজবুল্লাহ সামরিক শক্তি সম্বন্ধে তথ্য।

তবে এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ্য যে হিজবুল্লাহ নিজে থেকে সরাসরি কখনো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা সম্বন্ধে তথ্য প্রকাশ করেনা । কৌশলগত কারণেই তারা নিজেদের সামরিক সক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের কাছ থেকে গোপন রাখে ।এটি সংগৃহীত একটি অত্যন্ত প্রতিশোধ পরায়ন সংগঠন।

 হিজবুল্লার কিছু উল্লেখযোগ্য অপারেশনের কথা

তাদের উপর কেউ আঘাত করলে সে যেই হোক না কেন তারা পাল্টা আঘাত করবে । ২০১৫সালে ১৪জানুয়ারি ইজরায়েলের সৈন্যরা লেবাননের নিদ্রা নামক অঞ্চলের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে১০ জন হিজবুল্লাহ সেনাকে হত্যা করে।

এর মাত্র তিন দিনের মাথায় ইজরায়েলের সেবা খামার নামক এলাকায় ইলেকট্রিক কনভয় হামলা চালায় । এতে ১৭ জন ইসরাইলি সেনা নিহত এবং আহত হন আরো অনেকে ইসরাইলের মন চায়নি তারা ফিলিস্তিনি ট্যাংক বুলডোজার নিয়ে ঢুকে পড়ে আর তাণ্ডব চালানো শুরু করে কিন্তু এগুলোর কারণে একই কাজ তারা।

হিজবুল্লার কিছু উল্লেখযোগ্য অপারেশনের কথা বলতে গেলে, সবার আগে বলতে হয় তাদের ১৯৮২ সালের অপারেশনের কথা । সে সময় তারা ইজরায়েলের সেনা ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে৭২জন ইজরায়েলের সেনাকে হত্যা করে । ১৯৮৩ সালের হিজবুল্লাহ গেরিলাদের করা হামলাকে ইতিহাসের অন্যতম সফল এবং ভয়ানক হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মার্কিন সেনা ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে২৪১ জন মারে এবং ৫৪ জন ফরাসি সেনা হত্যা করেছিল। তারা এছাড়াও ১৯৮৪ সালে তেলআবিবে ইসরায়েলি সেনা দপ্তরে হামলা চালিয়ে২২ জন অফিসার এবং ১৩২ জন ইজরায়ালি সেনাকে হত্যা করে হিজবুল্লাহ।

লন্ডনে হামলা চালিয়ে সেখানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত কে হত্যা করে

১৯৮৫ সালে ইজরায়ালি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তারা আরও৪২ জন ইসরায়েলি সেনা কে হত্যা করেন। ১৯৮৬সালে তারা ইসরাইলে একটি বোমা হামলা চালায়। এতে ২৬ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়।  ১৯৯২সালে আর্জেন্টিনা বোমা হামলা করে সেখানে নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত কে হত্যা করে হিজবুল্লাহ। সাথে আরো ২৮ জন ইসরাইলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হন।

Capture

১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সেনা ক্যাম্পে হামলা করে ৯৪ জন ইজরাইলি সেনাকে হত্যা করে।  তারা একই বছরের লন্ডনে হামলা চালিয়ে সেখানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত কে হত্যা করে। ওই হামলায় আরও ৬২ জন নিহত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার মসজিদ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য বারোশো সেনাবাহিনীর ১৯৯৬ সালের সার্বিয়ার সেনা ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ২৩৩ জন সার্ভিস অন্যকে হত্যা করে হিজবুল্লাহ ।

একই বছরে তারা আমেরিকায় বোমা হামলা চালিয়ে৪২জন ইহুদিকে হত্যা করে।২০০৬সালে হিজবুল্লাহ ইসরাইল যুদ্ধ তেল আবিবের হামলা চালিয়ে ১২০ জনের অধিক ইসরাইলের সৈন্য কে হত্যার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সাধন করে হিজবুল্লাহ।

বর্তমানে সিরিয়ার আসাদ সরকারের পক্ষে

২০১২-২০১৫ সালে ইসরাইলি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায় তারা। দুই বারই ১৭ জন করে ইসরায়েলি সৈনিক হত্যা করে হিজবুল্লাহ। বর্তমানে সিরিয়ার আসাদ সরকারের পক্ষ নিয়ে এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে হিজবুল্লাহ। এসব কারণে বিশ্বের ৫৪ টি মুসলিম দেশ কে ইসরাইল ভয় না পেলেও হিজবুল্লাহকে তারা যমের মত ভয় পায়।

আসা করি এই পোস্ট টা আপনাদের ভাল লেগেছে। ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেয।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *