কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ জানে না

এক ভবঘুরে, ছন্নছাড়া তরুণীর ক্যারেক্টার স্টাডি। সে কে বা কোথা থেকে এসেছে, কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ জানে না, শুধু জানি সে বাঁচবে না, মুভির শুরুতেই তার বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায়, এলাকার অনেকেই তাকে দেখেছে, দেখা হয়েছে ক্ষণকালের জন্য, সে থাকে নি।

কারণ সে স্বাধীন থাকতে চায়, গ্রামাঞ্চলে একা একটা মেয়ে এভাবে দ্বার থেকে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, একটু খাবার, একটু আশ্রয় পেলে কিছুদিন থাকছে। আবার তাকে মুভ করতে হচ্ছে। যাদের সাথে তার দেখা হয়েছে তাদের কেউ কেউ তাকে হিংসাও করতো, স্ত্রীরা তাকে রাখতে চাইতো না, ঘরে পুরুষমানুষ আছে। দার্শনিকরা তাকে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে জ্ঞান দিত, তার এভাবে থাকা সম্ভব না।

অসাধারণ সব ল্যান্ডস্কেইপ রেখেছেন

উদভ্রান্ত এই তরুণীর মৃত্যুর আগের কয়েক মাস পরিচালক আইনাস ভার্দা প্রায় প্রামাণ্যচিত্র স্টাইলে তুলে ধরেছেন। অসাধারণ সব ল্যান্ডস্কেইপ রেখেছেন, অভিনেতাদের অনেকেই সাধারণ মানুষ। নোম্যাডল্যান্ডে ক্লোয়ি জাও’র মত তিনিও যেখানে যাকে পেয়েছেন তাকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন। এ নিয়ে ডকুমেন্টারিও আছে।

কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ জানে না

শুরুতেই শেষটা জানা থাকলে দেখার অভিজ্ঞতাটাই আলাদা। সেটাই ফিল করলাম। স্যান্ড্রিন বোনে’র এই নিয়ে ৩টা ফিল্ম দেখলাম, সম্ভবত সেরাগুলোই, অথচ Vagabond করার সময় তার বয়স মাত্র ১৮! এত কম বয়সে এই মাপের সিনেমা কেউ করেছে কিনা খুঁজে দেখতে হবে।

প্রায় ৩৬ বছর পর দেখেও অপরিসীম ভাবনার জগতে ডুবে ছিলাম। ভার্দা কি একার্থে গৃহহীনদের কথাই বলতে চেয়েছেন? নাকি তাদের কথা, যারা জীবনে ক্ষণিকের জন্য আসে, যাদের মৃত্যুর পর মর্ম বুঝতে পারি? গতানুগতিক সিনেমা বা গল্পবলিয়ের বাইরে কিছু দেখতে চাইলে এই ফরাসি মাস্টারপিস দেখতে পারেন।

ফরাসি মাস্টারপিস দেখতে পারেন

এ বছর পুরানো ফিল্মগুলোর সাহচর্যে এমন মুভি একের পর দেখা হচ্ছে। তারপরও Vagabond বা এই দিকভ্রান্ত তরুণীকে কখনো ভুলবো মনে হয় না।টুইটার থ্রেডের বাস্তব ঘটনার উপর তৈরি Zola আবারও প্রমাণ করলো কাস্টিং ডিরেক্টরদের কেন বিশেষ সম্মাননা থাকা উচিত অস্কারে।

চার মূল চরিত্রে কোলম্যান ডোমিঙ্গো আর নিকোলাস ব্রনকে চিনতেই পারিনি, মূল ন্যারেটার জোলা চরিত্রে টেইলর পেইজ অসাধারণ, মা রেইনিজ ব্ল্যাক বটমে ডোমিঙ্গো আর পেইজ দুজনেই ছিলেন! কি অদ্ভুত ট্রান্সফর্মেশান। জেনিফার লোপেজের Husslers মনে আছে? সাহসী স্ট্রিপক্লাবে বল ডান্সিং এর আরেক মহড়া দেখালেন টেইলর পেইজ।

এসব অভিনয় দেখলে তাদের ডেডিকেশন তাজ্জব বনে যেতে হয়। সবশেষে রাইলি কিউ। এই মেয়ের ফিল্ম চয়েজ এখন ওই স্তরে গেছে, যে সে যা-ই করবে আগ্রহ থাকবেই। আমার মনে হয় না তাকে সহজসাধারণ কোন চরিত্রে দেখেছি। সবখানেই দারুণ গোলমেলে চরিত্র করায় দক্ষ পুরা।

নারী-কেন্দ্রিক সিনেমার অপেক্ষায় ছিলাম

২০২১এ যে কয়টা নারী-কেন্দ্রিক সিনেমার অপেক্ষায় ছিলাম, সেখানে এখন শুধু Mass দেখা বাকি। Saint Maud, Sweat, Shiva Baby এর পর Zola – সবকটা আমার সেরা ফিল্ম তালিকায় থাকার মত। পরিবেশনায় A24 এবারও! গল্প স্ট্রিপ ক্লাবের দুই এক্সটিক ডান্সারের, যাদের একজন অন্যজনের আমন্ত্রণে ২ রাতের ছোট্ট রোডট্রিপে বের হয় কিছু কুইক মানির উদ্দেশ্যে।

সাথে আমন্ত্রক ডান্সারের বয়ফ্রেন্ড আর রহস্যময় এক ব্ল্যাক লোক, যার হাতেই যেন পুরা ট্রিপের চাবিকাঠি। বিভিন্ন স্ট্রিপ ক্লাবে শরীর দুলিয়ে পয়সা কামাবে এমনই ভেবেছিল ঘরে হাসবেন্ডকে সেক্স দিয়ে ঠান্ডা করে আসা জোলা। কিন্তু দুদিনের পরিচিত কাউকে বিশ্বাস করে এভাবে আগুন্তুকদের সাথে বের হয়ে যাওয়া হয়তো ভালো বুদ্ধি না।

সম্পূর্ণ R-Rated এই ইন্ডি মুলত একটা ক্রাইম কমেডি ড্রামা, যাদের ডার্ক হিউমারের আদলে সোশ্যাল মিডিয়া ঘরানার মুভি পছন্দ শুধু তাদের জন্য। স্টাইলিস্টিকালি দুর্দান্ত! সিনেমাটোগ্রাফি, কালার প্যালেটে টেনশান-ট্রিপের উদ্বিগ্নতা এমনভাবে উঠিয়ে আনা হয়েছে, যা স্যাফডি ব্রাদার্সের uncut gems এর মত কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে না ঠিক।

কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে

তবে সবসময়েই আনপ্রেডিক্টেবল এবং হাস্যকর। সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যাট দেখানোয় গতানুগতিক স্ক্রিন পরিবেশনা নেই, চ্যাট করলে ক্যারেক্টার সেগুলো ওই টোনেই পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে, যা খুবই রিফ্রেশিং। আবহ সঙ্গিতে মিকা লেভি (Monos, Jackie, Under the skin) আছেন যখন সৃজনশীল মিউজিক আছেই।

একটা দৃশ্য আছে, মোটেলের সামনের। মোটেলের দোতলায় বেইজবল খেলছে দুই বালক, তাদের বলের রিদমকেও আবহ সঙ্গীতের সাথে মিলিয়েছেন লেভি, জিনিয়াস! বিষয়বস্তু ঘোর ১৮+ হওয়ায় নগ্নতা-যৌনতা অবশ্যম্ভাবী, তবে পুরোটাই হিউমারাস। রগরগে ডান্স সিকোয়েন্স আছে প্রচুর, যৌনাচার আছে, নায়িকার নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রায় সবসময়েই উদ্বিগ্নতায় ভুগতে হবে।

থ্রিলার উপাদানও আছে, সম্পূর্ণ ড্রামা না। তবে গা শিরশিরে হরর নেই। সার্বিক টোন একটু হালকাফুলকা, কারণ মূলত এটা ক্রাইম কমেডি। আমেরিকান সমাজের সোশ্যাল বেশ কিছু ইস্যুতে ইঙ্গিত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, গভীরে গিয়ে সিরিয়াস বানিয়ে ফেলা হয়নি।

নির্মাতাদের কাছ থেকে এই সূক্ষ্মতাই

না হলে ডার্ক বিষয়বস্তুর ভারে ন্যুব্জ হয়ে যেতাম। নির্মাতাদের কাছ থেকে এই সূক্ষ্মতাই কাম্য। নেগেটিভ বলতে চরিত্রের ক্যারেক্টার আর্ক সেভাবে দেয়া হয়নি, এন্ডিং খানিকটা হুট করে, যা আলাদা আবেগীয় ক্যাথার্সিস তৈরি করে না। আচ্ছা, এই ঘটেছিল, দেখলাম-জানলাম-মজা পেলাম, ব্যস! চিত্রনাট্যকার হয়তো ইচ্ছা করেই সত্যতার বাইরে যেতে চান নি, অতিনাটকীয়তা করেন নি। তাই ফাইনাল পাঞ্চ মিসিং লাগতে পারে। আমি জার্নিটা ভরপুর এঞ্জয় করেছি। আমার অভিযোগ নেই।রেজিং বুল কে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুভি বলা হয়ে থাকে।

আমেরিকান ফিল্মস ইন্সটিটিউশন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আমেরিকান মুভিদের মধ্যে এই মুভিকে চার নাম্বার অবস্থানে রেখেছে।মুভির প্রধান চরিত্র জ্যাক লামোট্টার জন্য রবার্ট ডি নিরো প্রায় ৬০ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি করেন।এই চরিত্র অভিনয়ের মাধ্যমে ডি নিরো তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস জয় করেন।

মুভিটি মিডল ওয়য়েট ডিভিশন বক্সার জ্যাক লামোট্টার জীবনীর উপর নির্মিত। 𝐓𝐇𝐈𝐒 𝐏𝐎𝐒𝐓 𝐌𝐀𝐘 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐀𝐈𝐍 𝐒𝐏𝐎𝐈𝐋𝐄𝐑  জ্যাক লামোট্টা ১৯৪০ এবং ৫০ এর দশকে মিডল ওয়েট ডিভিশনের বক্সার ছিলেন। তার ছোট ভাই ছিলেন জই লামোট্টা।

তিনি আবার তার ম্যানেজার ও ছিলেন।জ্যাক লামোট্টার বক্সিং ক্যারিয়ার,ব্যাক্তিগত জীবন এবং বক্সিং থেকে অবসর এর পরের ঘটনা গুলোকে কেন্দ্র করে মুভিটি তৈরি করা হয়েছে। জ্যাক লামোট্টা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবার্ট ডি নিরো।আমার মতে এই মুভিতে রবার্ট ডি নিরোর পার্ফরম্যান্স অন্যতম সেরা পার্ফরম্যান্স ছিলো।

চরিত্র অনুযায়ী তাকে তার বক্সিং বক্সিং ক্যারিয়ার এর উপর গুরুত্ব দিতে দেখা যায় এবং তার সাথে সে একজন ক্ষুব্ধ ব্যাক্তি।তবে তাকে অনেক সময় বক্সিং নিয়ে অবহেলা করতেও দেখা যায়।তার হঠাৎ রাগ উঠে যায় এবং আশে পাশের মানুষ কে গালি দেওয়া এবং মারা শুরু করে।

মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়

মুভির শেষের একটি দৃশ্যে ডি নিরো কে দেয়ালে ঘুষি মারতে এবং মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়।যা তার ক্ষুব্ধ ব্যাক্তিত্ব কে আরো ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলে। পৃথিবীতে অনেকেই আছেন যারা অভিনয়ের জন্য ওজন বৃদ্ধি করেন কিংবা কমিয়ে ফেলেন।কিন্তু এই মুভিতে ডি নিরো কে প্রথমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা বক্সার হিসেবে এবং শেষের দিকে মোটা কমেডিয়ান হিসবে দেখা যায়।

মুভির একাধিক দৃশ্যে ডি নিরোকে তার স্ত্রীকে মারতে দেখা যায়।তার সাথে তাকে তার নিজের ভাইকে গালি দিতে এবং আঘাত করতেও দেখা যায়।জই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জো পেশি। তার প্রতিটা মুভিতে তার ডায়লগ ডেলিভারি অনেক ভালো হয়।যেভাবে সে কথা বলে তা অনেক ভিন্ন ধরণের।

তাকেও ডি নিরোর মতো ক্ষুব্দ এবং আক্রমণাত্মক মেজাজেও দেখা যায়। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট মুভিকে অনেকেই পুরনো ওল্ড ফ্যাশন মুভি বলে অভিহিত করে থাকেন।যার প্রবণতা হয়ত বাংলাদেশে সব থেকে বেশি।কিন্তু এই ক্ষেত্রে মুভিটি ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইটে তৈরী করে মুভির মান বজায় রাখা হয়েছে।তার সাথে পরিচালক হিসেবে মার্টিন স্কোরসেজি সেই সময়ে তার দক্ষতা দেখাতএ সক্ষম হয়ে ছিলেন।প্রথম দিকে মুভির স্ক্রীন প্লে বক্সিং এর উপর বেশি জোর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।

তবে মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ পর্যন্ত জ্যাক লামোট্টার ব্যাক্তিগত জীবনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।অন্য দুই চারটা বক্সিং মুভি থেকে একেবারে আলাদা এই মুভিটি। বেশি ভাগ বক্সিং সম্পর্কিত মুভি গুলোতে বক্সারের বক্সিং সংগ্রাম কে কেন্দ্র করে গল্প তৈরী করা হয়ে থাকে।তবে এই মুভিতে ফ্যামিলি এবং মাফিয়ারাও একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *