চট্টগ্রামে বেড়ে উঠেছি তাই আমার জীবনের

এতোদিন পর সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো! আমি চট্টগ্রামে বেড়ে উঠেছি তাই আমার জীবনের একটা বড় অংশ এই চট্টগ্রাম শহরটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আমার খুব আফসোস হতো চট্টগ্রামের বিখ্যাত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন” মামলাটা নিয়ে একটা ছবি বাংলাদেশে নেই।

মাস্টারদা সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অনন্ত সিং কতো বড় বড় বিপ্লবীদের নাম চট্টগ্রাম শহরের সাথে জড়িত। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রামের পটিয়া জেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এ উপমহাদেশের প্রথম নারী শহীদ।

হয়েছিল তখন পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন পরিকল্পনা যখন সংগঠিত হয়েছিল তখন পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের পুরো ঘটনাটি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই নারী বিপ্লবী। সেই একই ঘটনার দিন পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে সায়ানাইড জিভে লাগিয়ে শহীদ হন তিনি।

চট্টগ্রামের ডঃ খাস্তগীর সরকারি মহিলা উচ্চ বিদ্যালয় নামক সনামধন্য স্কুলটিতে তিনি তাঁর জীবনের শিক্ষাজীবন শুরু করেন, যেই স্কুলে পড়ার জন্য বর্তমানে অনেক মেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে! এতো এতো গুণ এবং ত্যাগী এই মানুষটি আমার শহরের মানুষ। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলাটি নিয়ে বলিউডে দুটি ছবি হয়েছে।

চট্টগ্রামে বেড়ে উঠেছি তাই আমার জীবনের

কিন্তু আমাদের দেশে একটা ডকুমেন্টারিও নেই। অবশেষে তা হচ্ছে। পোস্টার ভাল লাগছে আর প্রীতিলতার একিউরেট লাগছে। এখন পুরো ছবিটা প্রীতিলতা নামটির কেমন সুবিচার করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। খুব করে চাইবো ছবিটা যেন ভাল হোক।দুই খেতের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। একপাশ থেকে বাতাস ঠেলে আরেক পাশে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।

আমি শহুরে ছেলে হলেও ধুলোবালির বন্ধুগুলোর সাথে মিশে গেছি। দৌড়ে বেড়াচ্ছি। আছাড় খাচ্ছি। বাড়ি ফিরে এলে আম্মুর গালি খাচ্ছি এত ধুলো মাখার জন্য। কখনো দাদু ভাইয়ের পাঞ্জা ধরে ঝুলতে ঝুলতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। না, প্রিয় পাঠক, এগুলোর কোনোটাই সিনেমার প্লট না। এগুলো আমার কিছু স্বর্ণালি স্মৃতি।

তাইওয়ানিজ নিউ ওয়েভের দুই জনক

কিন্তু আমার বাড়ি থেকেও হাজার তিন কিলোমিটার দূরে তাইওয়ানের এক গ্রামে Hou Hsiao Hsien নিজের স্মৃতিকথা নিয়ে যে সিনেমা বানিয়েছেন, A Summer at Grandpa’s, তা যেন বারে বারে আমার স্মৃতির ভল্টে আঘাত করে। Ting-Ting নামের এক বালক, ছোট বোন Tung-Tung পুতুল নিয়েই থাকে।

মা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের দুজনের গ্রীষ্মে ঠাঁই হয় নানাবাড়িতে, গ্রামে। ব্যস, এতটুকুই। শিয়াও শিয়েনের সাধাসিধে সিনেমায় নেই আর কিছু। নেই গভীর দর্শনের ছাপ। নেই ভারি ইতিহাস আর রাজনীতি। শুধুই দুটো বাচ্চার গ্রীষ্ম। কেউ হয়তো জামাকাপড় খুলে বন্ধুদের সাথে নদীতে নেমে পড়ছে। কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের পাগলিটার সাথে৷

কেউ সাথ দিচ্ছে মামাকে, কেউ খাচ্ছে দাদির বকা। তাইওয়ানিজ নিউ ওয়েভের দুই জনক এডওয়ার্ড ইয়াং-এর সিনেমাগুলো যখন শহরে নজর দেয়, তখন শিয়াও শিয়েনের শুরুর দিকের সিনেমাগুলো গ্রামের গল্প নিয়েই। সিটি অফ স্যাডনেস দেখে শিয়েনকে চিনেছিলাম। সামার অ্যাট গ্রান্ডপা’স দেখে প্রেমে পড়ে যাই৷

তিনি ক্যামেরা ধরেন কিছুটা দূরত্ব রেখেই। কদাচিৎ তার ক্যামেরায় থাকে ক্লোজাপ। তার প্রভাবও পড়ে গভীর ভাবে৷ কোনো বড়সড় প্লটও নেই এই সিনেমায়। তবু বোঝা যায় যে পরিচালকের কতটা কাছের এই গল্পগুলো। কখনোই নস্টালজিয়া পর্ন বলে মনে হয় না এই সিনেমাকে।

মিষ্টি একটা গল্পের মধ্যেও শিয়াও

শুধু আঘাত দিয়ে যায় দর্শকের স্মৃতিতেও। তবু বাড়ে বাড়ে অবাক হই। মিষ্টি একটা গল্পের মধ্যেও শিয়াও শিয়েন টেনশন তৈরি করেন। খুব দারুণ ভাবে মারাত্মক ডার্ক কিছু উপাদান ঢুকিয়ে দেন। আর তাতে সিনেমার বাস্তবতার ভিত্তিটা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর প্রায় বেশিরভাগটাই দেখানো হয় দুই শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

তাই সেই নিষ্পাপ দুনিয়া আর জীবনের কঠোর বাস্তবতার মিশেলটাও কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এজন্যই ঈদে যখন আরো একবার দাদুবাড়ি যাওয়া হচ্ছে না, A Summer at Grandpa’s সিনেমাটার জন্য শিয়াও শিয়েনকে আরো একবার ধন্যবাদ জানাতে হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি স্পেশ্যাল ফোর্সের কর্নেল ওয়াল্টার ই. কার্টজ নিজের ইচ্ছা মতো কাজ কর্ম শুরু করেন।

তার বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের চার জন গোয়েন্দা কে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।তিনি তার নিজস্ব বাহিনী গঠন করেছেন যারা তাকে দেবতার মতো উপাসনা করে। ক্যাপ্টেন উইলার্ড কে পাঠানো হয় কর্নেল ওয়াল্টার ই.কার্টজের কমান্ড সমাপ্ত করা এবং তাকে হত্যা করার জন্য। আমার জীবনে দেখা অন্যতম সেরা সিনেমাটগ্রাফি ছিলো এই মুভিতে।

দুই টা দৃশ্য ছিলো যার সিনেমাটগ্রাফি দেখে মনে হচ্ছিলো এইটা কোনো মুভি নয় বরং বাস্তবতা। দুইটার মধ্যে একটা দৃশ্য হলো বোট দিয়ে পানির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য প্রায় ডুবে গেছে এবং আরেকটা হলো ফ্রেঞ্চ দের সাথে ক্যাপ্টেন উইলার্ড যখন খাবার খাচ্ছিলো তখন শেষ বিকেল কে যেভাবে তোলে ধরা হয়েছে তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

গডফাদারের পর এই মুভিই প্রথম যেখানে

গডফাদারের পর এই মুভিই প্রথম যেখানে পরিচালক-অভিনেতা জুটি ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এবং মার্লোন ব্রান্ডো একই মুভিতে কাজ করেন।মার্লোন ব্রান্ডো তার সময়ের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু এই মুভিতে তাকে প্রথম বার টাক মাথায় দেখা গেলো এবং তার সাথে এক ভয়াবহ চরিত্রও ছিলো।

তার চরিত্র অনেকটা এক্সটেন্ডেড ক্যামিওর মতো ছিলো। এই মুভি তে পরিচালক যুদ্ধকে অনেক বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন।যুদ্ধের ভয়াবহতা তো দেখানো হয়েছে তার সাথে একটা ইমোশনাল কানেকশন ও দেখা যায় মুভিতে। প্রধান চরিত্র ক্যাপ্টেন উইলার্ড রূপে অভিনয় করেছেন মার্টিন শীন।

তার অভিনয় ধারাবাহিক ছিলো।তাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছিলো সেই কাজ তিনি করছিলেন এবং বেশির ভাগ সময় সিরিয়াস ভাব টা ধরে রেখেছেন।লরেন্স ফিশবোর্ন আছেন মিঃ ক্লিন রূপে। মুভি তে সব থেকে বেশি কমেডি তিনি করেছেন। গুগলের মতে মুভির শ্যুটিং শুরু হওয়ার সময় তিনি নির্মাতা দের বলেন যে তার বয়স ১৭ ছিলো কিন্তু আসলে তার বয়স তখন ১৪ ছিলো।

তিনি মুভির রোল পাওয়ার জন্য এই মিথ্যা কথা বলেন।কিন্তু মুভি মুক্তি পাওয়ার সময় তার বয়স ১৭ বছর হয়ে গিয়ে ছিলো। আমি এই মুভির এক্সটেন্ডেড ভার্শনের রিভিউ লিখছি। এই মুভির অরিজিনাল ভার্শন ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায়।

যার দৈর্ঘ্য ছিলো ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট এবং জনরা হচ্ছে War/Drama. আর এক্সটেন্ডেড ভার্শন মুক্তি পায় ২০০১ সালে। যার দৈর্ঘ্য ৩ ঘন্টা ২৩ মিনিট এবং জনরা Epic/War.অরিজিনাল ভার্শনের সাথে আরো অনেক দৃশ্য যুক্ত করে এক্সটেন্ডেড ভার্শন তৈরী করা হয়েছে।প্রথম দুই ঘন্টার স্ক্রীনপ্লে বেশ দ্রুত ছিলো। কিন্তু এর পর থেকে কিছুটা ধীর গতির হয়ে যায়।

বিশেষ করে মার্লোন ব্রান্ডোর আগমনের পর থেকে বেশির ভাগ সময় তাকে স্ক্রীনে দেখা যায় এবং গল্প কিছুটা ধীর গতির হয়ে যায়। শেষের দিকের স্ক্রীন প্লে ধীর গতির না হলে মুভির মান নষ্ট হয়ে যেতো।কারণ গল্পে যদিও মার্টিন শীন এর চরিত্র প্রধান ছিলো কিন্তু মূল গল্প মার্লোন ব্রান্ডর চরিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *