প্রভোকেটিভ অঁতর’ আবেল ফেরারার সিনেমা

-‘প্রভোকেটিভ অঁতর’ আবেল ফেরারার সিনেমা। আজ তার জন্মদিনও (১৯’ই জুলাই)। সেই উদ্দেশ্যেই দেখতে বসা। তার লংটাইম কলাবোরেটর নিকোলাস সেইন্ট জনের চিত্রনাট্যতেই নির্মিত, ‘ডেঞ্জারাস গেইম’। ‘ফিল্ম উইদিন ফিল্ম’ ফরম্যাটে এগিয়েছে এই সিনেমা। এডি ইসরায়েল নামের এক পরিচালককে ঘিরে সিনেমার গল্প।

তার দাম্পত্যজীবন, এর পরিণতিটা দেখে ফেলেছে। কিন্তু এডি তাতে গ্রাহ্য না করে লস এঞ্জেলসে চলে আসে স্বামী-স্ত্রীর তিক্ত দাম্পত্যজীবন নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে। তার ওই ব্যক্তিগত গল্প থেকেই একপ্রকার এই সিনেমা, বলা যায়। শ্যুট যতই এগোতে থাকে এডি তার অভিনেতাদের ততোই চরমের দিকে ঠেলে দিতে থাকে।

এদিকে এডির সিনেমার অভিনেত্রী সারাহ’র

ক্যামেরায় বাস্তবিক করে তুলতে সে ক্রমাগত পুশ করতে থাকে অভিনয় শিল্পীদের। এদিকে এডির সিনেমার অভিনেত্রী সারাহ’র সাথে তার একটা প্রেমময় সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় শ্যুট করতে করতে। তাতে আছে দ্বন্দ্ব, আছে সংঘাত। আবার সারাহ্ এই সিনেমার অভিনেতা ফ্রান্সিসের সাথেও একটা সম্পর্কে আবদ্ধ, যেটা তিক্ততা ছুঁয়েছে।

প্রভোকেটিভ অঁতর' আবেল ফেরারার সিনেমা

তাই সিনেমার গল্পের এক্সপ্লয়টেশনটা ফ্রান্সিস, সারাহ’র উপর রীতিমতো বাস্তবেই করা শুরু করেছে অভিনয়কে বাস্তবিক করার নাম দিয়ে। এডি সেই সংঘাতকে আরো অভিঘাতী করে। তার বাস্তব জীবনেও এর প্রভাব পড়ে। সিনেমা এগোতে এগোতে একসময় কোনটা সিনেমার বাস্তব আর কোনটা সিনেমার ভেতর সিনেমা; সেই লাইনটাই ধূসর থেকে আরো অস্পষ্ট হতে থাকে।

সংক্ষিপ্ত গল্পধারণা থেকেই বোঝা যায়, ‘ডেঞ্জারাস গেইম’-এর ন্যারেটিভ খুবই জটিল। সময় যতোই গড়িয়েছে ফেরারা তার ন্যারেটিভকে আরো প্যাঁচানো আর জটিল করে তুলেছেন। পুরোদমের ‘সেল্ফ-ইন্ডালজেন্স’ কাজ এটা, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই কারণেই তো ফেরারা প্রভোকেটিভ ফিল্মমেকার।

তবে এই জিগ-স পাজলের মতোন ন্যারেটিভ একসময় গিয়ে ফেরারার কাজের ভক্তদের জন্যও ক্লান্তিকর হয়ে উঠে/উঠবে। অহমের জায়গাটাতেই শক্ত হয়ে ছিল। মেইনস্ট্রিম হলিউডের প্রতি তেরছা দৃষ্টিটাও আছে। আর্ট হাউজ সিনেমার এপ্রোচের সাথে ‘বি-মুভি’র অলংকারের যেই মিশ্রণটা তিনি করেন, সেটা অবশ্য এই সিনেমায়ও উপস্থিত।

হওয়ার মুহূর্ত একদম জীবন্ত হয়ে উঠেছে

এক্সপ্লয়টেশনের প্রকৃতি এতেও দেখা যায়। তবে সেটা গ্রাফিক হওয়ার চাইতে মনস্তাত্ত্বিক বেশি। সেদিক থেকে তাই চেম্বার ড্রামা হওয়া সত্ত্বেও থ্রিল, ভায়োলেন্সের কড়চা এতে আছে। তাই বোঝাই যায়, ন্যারেটিভ নিয়ে কি পরিমাণ নিরীক্ষা এই সিনেমায় আছে। ভিজ্যুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজে ফেরারার সিগনেচার স্টাইলেই একদম ‘র’ গুণাগুণ সম্পন্ন হয়ে উঠেছে সিনেমাটি।

গ্রিটি ইমেজারির জন্য আউটলুকে গ্রেইনি ভাব রাখা হয়েছে, যেটা তিনি করেন স্বভাবত। মাঝেমাঝে ‘হোম ভিডিও’র স্টাইলটাও চোখে পড়ে ভিজ্যুয়ালে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে হার্ভি কাইটেল অভিনয় করেছেন। আগের বছরের ‘ব্যাড লিউটেন্যান্ট’-এ অন্যতম ক্যারিয়ার সেরা অভিনয় করার পর আরো একবার ফেরারার সিনেমায় এই মেথড অভিনেতা।

তার প্রতিটা আবেগীয় মুহূর্ত, ক্ষিপ্ত হওয়ার মুহূর্ত একদম জীবন্ত হয়ে উঠেছে পর্দায়। চরিত্রের গঠন এবং কাইটেলের শক্তিশালী অভিনয়, চরিত্রটাকে পরিচালক ফেরারা’রই একটা ভার্সন করে তুলেছে। ম্যাডোনার অভিনয়শৈলী অবশ্য তার চরিত্রটার আবেগের সাথে দর্শককে সংযুক্ত করতে পারেনি।

চাতুর্জের সাথে অনুমেয় ব্যাপারগুলো এড়িয়ে

আবেল ফেরারা তার সিনেমার মেজাজের জন্য, নিগূঢ় বিষয়াদির জন্য এবং বিষয়াদির ব্যবচ্ছেদে সাহস আর অবাধ্যতার জন্য যেমন প্রভোকেটিভ, তেমনি নটোরিয়াস হিসেবেও পরিচিত। এই ‘ডেঞ্জারাস গেইম’ও তেমনই। কোন বাঁধা মানেনি সিনেমার ভাষা নিয়ে বারবার নিরীক্ষা করতে গিয়ে। সেল্ফ-ইন্ডালজেন্ট হয়ে সেটা করতে গিয়ে অবশ্য ‘কোহেরেন্স’কে বিসর্জন দিয়েছে।

কেইজের সর্বশেষ মোটামুটি ভালো মুভি হিসেবে Mandy আর Color out of space কে ধরা যায়। এর আগে JOE বলে একটা ফিল্মও ভালো ছিল। তবে ম্যান্ডি পুরা ক্লাসিক, যদিও সেখানেও কেইজ তার চিরাচরিত পাগলা ফর্মে। এসকল প্রত্যাশা নিয়ে PIG দেখে সারপ্রাইজ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, কারণ এই ফিল্ম মোটেই অ্যাকশন রিভেঞ্জ ধাঁচের ফিল্ম না। জন উইকীয় মিল একটাই – এখানেও নায়ক একজন একাকী লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা অসামাজিক গোছের মানুষ, যার একটা গোপন অতীত আছে। কেইজের লুক দেখেই সন্ন্যাসী মনে হয়। আসলেই তাই।

জঙ্গলে তার বসবাস এক শূকরের সাথে, তাকে Pig হিসেবেই আখ্যা দেয়া হয়, নাম নেই। যেন এটা যে কারো অতি কাছের কেউ হতে পারে, যে হারিয়ে যায়, বা অপহৃত হয়। ফিরে পেতে কেইজকে তার খোলস থেকে বের হতে হয়। তার সাথে পার্শ্ব চরিত্রে আছেন অ্যালেক্স উলফ (Hereditary এর ছেলেটা)। এই দুজনের সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ।

অভিষিক্ত পরিচালকের যত্নশীল পরিচালনাও

ওই ছেলেটার ব্যাকস্টোরি, ক্যারেক্টার আর্কও ইন্টারেস্টিং। তবে PIG মুভিটি শুধু কেইজের পারফর্মেন্সই না, অভিষিক্ত পরিচালকের যত্নশীল পরিচালনাও প্রশংসার দাবীদার। সিনেমাটোগ্রাফি, বিষণ্ণ কালার প্যালেট আর আবহ সঙ্গীতও অসাধারণ! অ্যাকশন না থাকলেও খারাপ কিছুর আশঙ্কা সর্বদা বজায় ছিল, একটা ভায়োলেন্ট দৃশ্য আছে।

চিত্রনাট্য খুব চাতুর্জের সাথে অনুমেয় ব্যাপারগুলো এড়িয়ে গেছে। ৮০ভাগ মানুষ কাহিনী একদিকে যাবে ধরে নেয়, মুভি এমন আলাদা পথ বেছে নেয়, যা এর ঘরানাকে থ্রিলার থেকে ইন্ডি ড্রামার কাছাকাছি নিয়ে যায়। Leave no trace, You were never really here কে মনে করায়।

নিকোলাস কেইজ এর শান্ত, ঠান্ডা শীতল অভিনয় সহজেই তার ক্যারিয়ার সেরা পার্ফরমেন্স হিসেবে গণ্য হবে। আর পরিচালককে সম্ভাবনাময়দের একজন হিসেবে। PIG কিছুটা স্লো, জীবনযুদ্ধে সন্ন্যাস নেয়া যোদ্ধার ফিরে আসার গল্প নয়, তার একাকীত্ব, জীবনের শেষ সম্বলটাকে আঁকড়ে ধরে থাকার প্রয়াসের গল্প।

নির্মাণশৈলীই একে অন্য কাতারে নিয়ে গেছে, না হলে সাধারণ ইন্ডি হয়েই থাকতো। এই মুহূর্তে ২০২১ এ হলিউডের সেরা ১০ সিনেমার তালিকায় চলে এসেছে। আবার দেখার মত কাজ! আজ আপনাদের এমন এক চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি যা পুরো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত সেই সাথে মর্ডাণ জাপানের পরিচয় বহন করে। চলচ্চিএ টি ইউজি ইয়ামাদা পরিচালিত ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জাপানিজ হিস্টোরিক্যাল ড্রামা ফিল্ম।

শতকের মাঝামাঝি সময়কে কেন্দ্র করে

চলচ্চিত্র টি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়, মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার কয়েক বছর আগের গঠনা। ACADEMY AWARD NOMINEE FOR BEST FOREIGN LANGUAGE FILM সুহেই ফুজিসাওয়া এর স্বপ্লদৈর্ঘ্যের গল্প “দ্যা বমবু সোর্ড” থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে চলচ্চিত্র টি নির্মিত।

মুক্তির পরে চলচ্চিত্র টি অভূতপূর্ব রেকর্ড গড়ে। বেষ্ট পিকচার, বেষ্ট ডিরেক্টর, বেষ্ট এক্টর, বেষ্ট এক্ট্রেস এবং বেষ্ট স্ক্রিনপ্লে সহ ১২ টি জাপান একাডেমী অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে সেইসাথে ৭৬তম অস্কারে “বেষ্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম” ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পায়।  মুভিতে অভিনয় করেছেন জাপানের তৎকালীন স্বনামধর্মী অভিনেতা হিরেইউকি হানাদা। তাকে প্রথম দেখি জাপান হংকং যৌথ ফিল্ম ‘নিনজা ইন দ্যা ড্রাগনস্ ড্রেন” এছাড়া “লিজেন্ড অফ দ্যা এইট সামুরায়”।

‘নিনজা ইন দ্যা ড্রাগনস্ ড্রেন” আমার খুব প্রিয় মুভি এছাড়া “লিজেন্ড অফ দ্যা এইট সামুরায়” ও উপভোগ্য ছিল। এশিয়া ছাড়াও তিনি এভেন্জারস্ ইনফিনিটি, এন্ড গেম, দ্যা ওলভারিন, দ্যা লাস্ট সামুরায় সহ বেশ কিছু হলিউড ফিল্মে কাজ করেছেন,তবে এই ফিল্ম টা অনন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *