বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কতটুকু বাড়ছে–কমছে, তার হিসাব পাওয়া যায় পণ্য বেচাকেনার কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলোতে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো কমোডিটি এক্সচেঞ্জের একটি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) তথ্যে দেখা যায়, সংঘাতের পর যেভাবে দাম বেড়েছিল, এখন তা অনেকটাই কমেছে। তবে স্বাভাবিক দরে এখনো ফেরেনি।
সয়াবিন তেল লেনদেনের কথাই ধরা যাক। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিকাগোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১২৬ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। এরপর লিটারে তা ১৬ টাকা বেড়ে ১৪২ টাকা ৫০ পয়সায় ওঠে। এরপর গত সোম থেকে বুধবার তিন দিনে লিটারে ১৫ টাকা কমে ১২৭ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার আবার দর একটু বেড়েছে।
বিশ্বাজারে গমের বড় উৎস হলো রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বে গমের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ, এই দুটি দেশ গত মৌসুমে বৈশ্বিক গম রপ্তানির ২৮ শতাংশ করেছে। ফলে সংঘাতের পর দেশ দুটি থেকে সরবরাহ অনিশ্চয়তায় প্রভাব পড়ে। এতে গমের দাম বাড়ে। যেমন, শিকাগোতে ‘সফট রেড উইন্টার’ জাতের গমের দাম ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতি কেজি ছিল ২৯ টাকা ৩২ পয়সা, যা গত ৭ মার্চ ৪৫ টাকায় ওঠে। গত বুধবার দাম কমে ৩৩ টাকা ৭৮ পয়সা হয়।
বিশ্ববাজারে চিনির দামও কমেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিকাগো বোর্ডে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৩৪ টাকা। গত ১৪ মার্চ এই দর ওঠে প্রতি কেজি ৩৭ টাকা ৯১ পয়সায়। গত বুধবার আবার কমে আসে প্রায় ৩৫ টাকায়। একইভাবে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সয়াবিনবীজ এবং পাম তেল ও পাম অলিনের মতো পণ্যের দামও কমেছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও প্রভাব পড়ে। এর বড় উদাহরণ হলো, পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসা।
শাহেদ উল আলম, খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে পণ্যভেদে পাউন্ড, টন, বুশেল ও ব্যারেল—এমন নানা এককে পণ্য কেনাবেচা হয়। তবে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যভেদে লিটার ও কেজিতেই বেচাকেনা হয়। সে জন্য এই প্রতিবেদনে দাম পর্যালোচনায় বাংলাদেশের একক বিবেচনা করা হয়েছে।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কত, তা কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রতিদিনের দর অনুযায়ী ঠিক হয়। বৈশ্বিক ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারীরা পণ্য সরবরাহের সময় এই দরের সঙ্গে জাহাজভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে। কোনো পণ্য কেনার ঋণপত্র খোলা হলে দেশে পৌঁছাতে দেড় থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এরপরও বিশ্ববাজারের দামের প্রভাব পড়ে দেশীয় পাইকারি বাজারগুলোতে। দাম কমলে পণ্য ধরে রাখতে চান না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাতে প্রভাব পড়ে পণ্যের দামেও।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে সয়াবিনের দাম লিটারে ৯ টাকা কমেছে। পাম তেলের দাম কমেছে লিটারে ১৪ টাকা। চিনির দামও প্রতি কেজি দুই টাকা কমেছে। এ ছাড়া ছোলার দাম কমেছে। অবশ্য গমের দামে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ভারত থেকেই এখন সিংহভাগ গম আমদানি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহেদ উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও প্রভাব পড়ে। এর বড় উদাহরণ হলো, পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসা। অবশ্য আগের তুলনায় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও দাম সংশোধিত হয়েছে। পাইকারি বাজারে কমলে খুচরায়ও সামনে প্রভাব পড়ার কথা।