বিদ্যমান সিস্টেমকে ভাঙা আদৌ

আসলে এই মুভিটার সম্বন্ধে যেটাই বলবো সেটাই কম হয়ে যাব। সাইকোলজিকাল চিন্তাধারা যে কোন লেভেলে নিয়ে গেছে এই ছবিটা না দেখলে আসলে কেউ বুঝতে পারবে না আসলে এই মুভিটির কোন স্পয়লার দেয়া উচিত না কোন স্পয়লার দেয়া উচিত না কোমল হৃদয়ের, নীতি ও আদর্শে বলীয়ান গোরেংয়ের দ্য হোলের জীবন ঠিক কোন দিকে ধাবিত হয়, সে কি অন্যান্য বন্দিদের মতোই হিংস্র পশুতে পরিণত হয়,

সবার দেখার উপযোগী নয় ছবিটি

নাকি নিজের মনুষ্যত্ব ধরে রাখতে সমর্থ হয়? অর্থাৎ বিদ্যমান সিস্টেমকে ভাঙা আদৌ কোনো ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে সম্ভব, নাকি তাকেও ওই সিস্টেমের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হয়, সে প্রশ্নকে সামনে রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে ছবির কাহিনী এবং এ প্রশ্নের উত্তর লাভের একমাত্র উপায় মাত্র ১ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটের, টানটান উত্তেজনাময় ছবিটি নিজে দেখে ফেলা।
বিদ্যমান সিস্টেমকে ভাঙা আদৌ
তবে বলাই বাহুল্য, সবার দেখার উপযোগী নয় ছবিটি। এতে একাধারে রয়েছে ক্যানিবালিজম, আত্মহত্যা, ক্ষুধার তাড়নায় ধুঁকে ধুঁকে মরা, প্রচুর রক্তপাত, এবং এমন সব কর্মকাণ্ড, যা কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব।
কিন্তু হ্যাঁ, এগুলো তো সার্ভাইভাল জনরার চলচ্চিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেহেতু ‘দ্য প্ল্যাটফর্ম’-এর চরিত্রদেরও প্রধানতম লক্ষ্য ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা, তাই এটিও স্পষ্টতই একটি সার্ভাইভাল জনরার ছবি।সো হ্যাপি ওয়াচিং সত্য বলতে আমি বলিউড মুভি দেখিনা একদমই।
মার-মার কাট-কাট সাথে রোমান্টিক মুভিগুলোকে সস্তা লাগে আমার কাছে। কিন্তু গত কিছুদিন যাবত লুডু মুভির এতো রিভিউ দেখে ইচ্ছে হলো একবার দেখি কী আছে এতে। সত্যিই আমাকে অবাক করে দিলো এই মুভিটি। বলিউডের দুই ফ্লপ অভিনেতা আদিত্য অভিষেক দুজনের   অভিনয়ই   আমাকে অবাক করেছে।
রাজকুমার রাও এক কথায় অসাধারণ। সেই সাথে পংকজ ত্রিপাঠি তো আছেনই। বলতে হয় দুই দাঙ্গাল কন্যার কথাও। নিখুঁত না হলেও যথেষ্ট ভালো ছিলো তাদের অভিনয়। সবার উপরে রাখবো অভিষেককে। বাচ্চাটার সাথে পুরো ইমোশনাল করে দিয়েছিলো আমাকে। চারটা গল্পকে চারভাবে পরিচালনা  করা চাট্টিখানি কথা না। দারুণ কাজটি করেছেন অনুরাগ বসু। প্রশংসা করতে হবে গান গুলোরও। বিজি এম ও বেশ ভালো ছিলো। ইন্ডিয়ান মুভিতে ভালো বিজিএম পাওয়া যায়না খুব একটা। চমৎকার গল্প,চমৎকার অভিনয়।

দেখে ফেলুন এই সুন্দর

আর  কী লাগে? কোনো ধরণের স্পয়লার দিয়ে মজা নষ্ট করতে চাইনা। যারা দেখেননি,দেখে ফেলুন এই সুন্দর মুভিটি। পুরো সিনেমার সামারি উপরের দুই লাইন। টেনেট সিনেমাটি প্রিডেস্টিন্ড টাইমলাইন লুপের উপর ভিত্তি করে বানানো। অর্থাৎ, আপনি যা কিছুই করেন না কেন, ঐ টাইমলাইন ভেঙে বের হতে পারবেন না।
অন্যান্য টাইম বেন্ডিং মুভির মতো চাইলেই টাইম ট্রাভেল করা যায় টাইপ মুভি এটা না। টেনেটে যেটা হয় সেটা হচ্ছে টাইম ইনভার্সন। অর্থাৎ, আপনি একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত যেতে পারবেন ঠিকই কিন্তু আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো রিভার্স হতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার রিটার্ন পয়েন্টে ফেরত আসেন।
এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বস্তুকেও রিভার্স করা যায়। অদূর ভবিষ্যতে একজন সায়েন্টিস্ট এই টাইম রিভার্সিং অ্যালগরিদম উদ্ভাবণ করেন। তিনি এই অ্যালগরিদমগুলোকে ৯টি ভিন্ন আর্টিফ্যাক্টসে লুকিয়ে রাখেন। সেগুলো আবার বিভিন্ন রেডিও অ্যাক্টিভ হটস্পটে পুঁতে রাখা হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্লুটোনিয়াম খননের কাজ করা এক কিশোর সেই আর্টিফেক্টগুলোর সন্ধান পান। এবং পরবর্তীতে আ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে সেসব একত্রিত করার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেন। ঐ টাইম রিভার্সিং অ্যালগরিদম দিয়ে যেমন পৃথিবী ধ্বংস করা সম্ভব, তেমনি বাঁচানোও সম্ভব। এটা মূলত নির্ভর করছে কে কীভাবে এটাকে ব্যবহার করছে।
টেনেট মূলত একটি সস্থার নাম। যারা এই টাইম ইনভার্সন পরিচালনা করে থাকে। সেখান থেকেই প্রোটাগনিস্টের আগমণ এবং প্যালিনড্রমিক টাইমলাইনে ক্লাইমেক্সের দিকে অগ্রসর হওয়া। টেনেট নোলানের বাকি মুভিগুলো থেকে একদম আলাদা। এটা পুরোদস্তুর স্টাইলিশ অ্যাকশন থ্রিলার। আপনি যদি মেমেন্টো, ইন্টারস্টেলার বা ইনসেপশনের মতো কিছুর আশায় থাকেন তবে হতাশ হবেন।
আর যদি বাসায় বসে মুভিটা দেখেন তবে হতাশা বাড়বে বৈ কমবে না। যারা ইতিমধ্যেই হলপ্রিন্টে দেখে ফেলেছেন তাদের জন্য সমবেদনা রইলো। এটা আইম্যাক্স থিয়েটারে উপভোগ করার মতো সিনেমা। সিনেমাটা ডিজাইন করা হয়েছে থিয়েটারে এক্সপেরিয়েন্স করার জন্য।

সিকোয়েন্সের বিট ফিল করতে না

বড় পর্দায় ধুন্ধুমার সাউন্ড সিস্টেমে, প্রতিটা সাসপেন্স সিকোয়েন্সের বিট ফিল করতে না পারলে টেনেটের মূল মজা থেকে বঞ্চিত হবেন। দ্য ডার্ক নাইটের মতো ডায়নামিক সাউন্ড ইফেক্টে ভরপুর ছিলো একদম। কিছু জায়গাতে এতোটাই ওভারপাওয়ার্ড ছিলো যে ডায়লগগুলো স্পস্ট বোঝা যাচ্ছিলো না। এই সাউন্ডমিক্সিং নিয়ে ক্রিটিক ব্যাকল্যাশও ফেইস করেছে সিনেমাটি।
গ্লোবাল প্যান্ডেমিকের কারণে মেরিট থাকা সত্ত্বেও বক্সঅফিসে বিলিয়নিয়ার ক্লাবের ধারে কাছেও যেতে পারেনি টেনেট, এমনকি হাফ বিলিয়নের মাইলফলকও স্পর্শ করতে পারেনি আয় দিয়ে। কাস্টিং মন্দ হয়নি। প্রোটাগনিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেভিড ওয়াশিংটন।
তার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি প্রিয় অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন এর ছেলে। এক কথায় বাবার মান রেখেছেন। দারুণ পারফর্ম করেছেন। তার চাইতেও যার পারফর্মেন্স নজর কেড়েছে তিনি হচ্ছেন রবার্ট প্যাটিনসন। তার এই চরিত্রে পারফর্ম করা দেখে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি, ব্যাটম্যানের চাইতে ব্রুস ওয়েইন হিসেবে তিনি বেশি সফল হবেন।
এ সুপারস্টার ইন দ্য মেইকিং। ওয়াশিংটন এবং প্যাটিনসনের ব্রোম্যান্স ছিলো দেখবার মতোন। দারুণ টিমআপ করেছেন দুইজনে। ৬ ফিট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার অভিনেত্রী এলিজাবেথ ডেবিকিও নজর কেড়েছেন বেশ। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের ভেটারান অ্যাকট্রেস ডিম্পল কাপাডিয়া।
এই সাব-কন্টিনেন্টের মেধাবী অভিনেতাদের সুযোগ দিলে তারাও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম। ইরফান খান তারই প্রমাণ। কোল্ড হার্টেড অ্যান্টাগনিস্ট  হিসেবে কেন্নেথ ব্রানাহ’কে মনে হচ্ছিলো কোনো বন্ড ফিল্মের ভিলেইন। পুরো ফিল্মটা ভিজুয়ালি স্টানিং, নো ডাউট অ্যাবাউট দ্যাট। সাথে রিভার্স অ্যাকশন সিকুয়েন্সগুলো যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।টেনেটের   প্রথমার্ধে কিছুটা কমিক রিলিফ থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধ ছিলো মারাত্মক ফাস্ট পেইসড। পুরো মুভিটাই প্রোটাগনিস্টের দৌড়ের ওপর থাকার গল্প।

সিনেমাহলে দর্শকদের দেয়া হয়নি

পান থেকে চুন খসলেও সেটা নোটিশ করার মতো সময় সিনেমাহলে দর্শকদের দেয়া হয়নি। ফলাফল, পিন ড্রপ সাইলেন্স ছিলো পুরো সিনে প্লেক্সে। যাদের থিয়েটারে দেখার ইচ্ছে আছে তারা ট্রাই করতে পারেন। দারুণ সময় কাটবে। তবে যারা অপেক্ষা করছেন ভালো প্রিন্টের জন্য, তারা আপাতত ধৈর্য ধারণ করুন। সবুরে মেওয়া ফলবে। সিনেমাটা আরেকটু পুরোনো হলে ব্যাখ্যা সহকারে ব্যবচ্ছেদ করার চেস্টা করবো। আপাতত সবার জন্য স্পয়লার ফ্রী থাক। তো এক কথায় কেমন লাগলো নোলানের টেনেট? ওয়েল, দ্য আন্সার ইজ— লিটল বিট ড্রামাটিক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *