আড়াই মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে সিরিঞ্জ দিয়ে বিষাক্ত কিছু ঢুকিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গার এলাকায় ইকবাল হোসেনর নামে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড় থেকে ওই শিশুর বাবা ইখলাছ উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা শহরের মাঝেরপাড়ায় এলাকায় নিজ বাড়িতে ইখলাছ তাঁর ছেলের শরীরে সিরিঞ্জ দিয়ে বিষাক্ত দ্রব্য ঢুকিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ওই শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া পথে শিশুটির মৃত্যু হয়।
ওই শিশুর মা মিতালী খাতুন বাদী হয়ে গতকাল রাতে স্বামী ইখলাছকে একমাত্র আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেপ্তার ইখলাছের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বারাদী ইউনিয়নের আঠারোখাদা গ্রামে। তবে তিনি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের মাঝেরপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন এবং ফেরি করে প্লাস্টিকপণ্য বিক্রি করেন।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ বলেছেন, শিশু ইকবালের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ইখলাছ উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রাতেই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করার পর ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। ইখলাছকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে নিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিতালী ও ইখলাছ দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে করেচিলেন। ইখলাছের প্রথম সংসারে কোনো সন্তান নেই। ইখলাছের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড় গ্রামে থাকেন। ইখলাছ মূলত দুই স্ত্রীর সঙ্গেই থাকেন। এদিকে মিতালী খাতুনের প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। তাঁর আগের সংসারের দুই সন্তান মিতালীর মা–বাবার কাছে থাকে।
মিতালীর ভাষ্য, প্রথম স্ত্রীর ঘরে সন্তান না থাকলেও তাঁর ঘরে সন্তান জন্ম নেওয়ায় ইখলাছ খুশিই ছিলেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ইখলাছ মিতালীর চরিত্র নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। পাশাপাশি ইখলাছ মাঝেমধ্যে দাবি করতেন সন্তানটি ইখলাছের নয়। বেশ কিছু দিন ধরে ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য ইখলাছ নানা রকম পাঁয়তারা করছিলেন।
১৫ দিন আগে ছেলে অসুস্থ হলে ওষুধ কেনা হয়। ওই ওষুধ খাওয়ানোর পঞ্চম দিনে ওষুধের শিশিতে বিষের গন্ধ পাওয়া যায়। পরে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে মিতালী সংসারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় শিশু ইকবালের কান্নার শব্দ পেয়ে তিনি ঘরে গিয়ে দেখেন, বাবার কোলে ইকবাল ছটফট করছে এবং বাঁ পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এ সময় ইখলাছ তাঁর স্ত্রীকে বলেন, কিছুদিন আগে ছেলেকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। টিকা দেওয়ার স্থান থেকে থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
এ সময় বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী শিল্পী খাতুন ও প্রতিবেশী লতা খাতুন এসে দেখতে পান, পায়ে টিকা দেওয়ার স্থানের পাশের একটি ছিদ্র দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে তাকে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনির সমস্যার কারণে ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসাও দেওয়া হয়। তবে ক্রমে ওই শিশুর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। রাজশাহী যাওয়ার পথে কুষ্টিয়ার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর শিশুটি মারা যায়। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয় এবং ইখলাছকে রাতেই গ্রেপ্তার করে।
জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শিশু ইকবালকে ভর্তির সময় বাঁ পায়ে পাশাপাশি দুটি ছিদ্র দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি ছিদ্র থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। এ ছাড়া শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হওয়ায় ওই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই শিশুর শরীরে বিষাক্ত কিছু ঢোকানো হয়েছিল কি না, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে কিছুদিন আগে শিশু ইকবালকে ওষুধের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন মাহবুবুর রহমান।